সেন্টমার্টিন ডায়েরি
top of page

সেন্টমার্টিন ডায়েরি

By Minhaz Efat

 

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের সবচেয়ে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত ছোট একটি প্রবাল দ্বীপ। দ্বীপটির পর্যকটদের কাছে অতি জনপ্রিয়। ২০০৭ এর শেষের দিকে হুমায়ূন আহমেদ এর দারুচিনি দ্বীপ ছায়াছবির জন্য আরো অধিক জনপ্রিয়তা পায়। প্রচুর পরিমানে নারিকেল গাছের জন্য স্থানীয়দের কাছে নারিকেল জিঞ্জিরা হিসেবে ও পরিচিত।



অক্টোবরের ১৪ তারিখ সন্ধ্যায় নোয়াখালীর চৌমুহনী থেকে রওনা দেই চট্টগ্রাম, সেখান থেকে রাতে এস আলম এ চড়ে ভোরে টেকনাফ পৌঁছাই। আমাদের কাছে খবর ছিল ১৫ তারিখ টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাবে সেন্টমার্টিন গামী শীপ। কিন্ত সেখানে পৌঁছে শুনি ভিন্ন খবর। এতদূর যেহেতু গিয়েছি ফিরে না এসে নিয়ে নিলাম ট্রলারের টিকিট, মোটামোটি দোয়া কালাম পড়ে চড়ে বসলাম। নাফ নদী পার হয়ে বঙ্গোপসাগর এর বেশ খানিকটা পথ যাওয়ার পর শুরু হলো ঢেউয়ের সাথে ট্রলার এর লড়াই, সাগর ঠান্ডা ই ছিল, কিন্ত তাও যথেষ্ট বেগ ছিল স্রোতের, দুলছিল ট্রলার, যেটুক এডভেঞ্চারাস ফিল ততটুকুই ভয়, সাথে প্রচন্ড রোদ। তবে সেন্টমার্টিন এর কাছাকাছি পৌঁছোতেই, কাঙ্ক্ষিত নীল জল আর চারপাশের চোখ ধাধানো পরিবেশে ক্লান্তি টা অনেকাংশেই কমে গেছে। যাইহোক আমি রেকমেন্ড করব যদি একদম ঠেকায় না পড়েন, তাহলে ট্রলারে যাবেন না।


মোটামুটি প্রায় ৩ ঘন্টার এডভেঞ্চারাস ট্রলার ভ্রমণের পর আমরা দুপুরের দিকে পৌঁছালাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন এ। হোটেল চেক ইন করে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষে নারিকেল জিঞ্জিরার বিখ্যাত ডাবের পানি পেটে চালান করে দারুচিনি বিচে গিয়ে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সুর্যাস্ত উপভোগ করলাম, অফ সিজন এর জন্য পর্যটক নেই বললেই চলে, প্রাইভেট আইল্যান্ড ফিল পাচ্ছিলাম, পরিবেশ টা ছিল অপার্থিব। বেশ কিছুক্ষণ বিচে ঘুরাফেরা করে রাতের খাবার খেয়ে আবার ফিরে এলাম বিচে, বিচের চেয়ারগুলো নিয়ে নিলাম সারারাত এর জন্য। প্রায় সারারাত বিচেই আলোকবর্ষ দূরের তারাদের সাথে কাটালাম, আকাশটা বর্ণনা করার চেষ্টা করাও বোকামি, এর বর্ণনা হয়না, জীবনে প্রথমবার সেন্টমার্টিন আসাটা স্মরণীয় হয়ে রইল প্রথম দিনেই। ভোরে সূর্যদয় দেখার ইচ্ছে থাকলেও রাতে না ঘুমানোর জন্য মিস হলো।



সকালে নাস্তা সেরে সাইকেল ভাড়া করে রওনা দিলাম ছেঁড়াদ্বীপ, বিচের মধ্যে সাইকেল চালানোর কষ্ট টের পাচ্ছিলাম বেশ, শেষমেষ পৌঁছালাম ছেঁড়াদ্বীপ, নীল পানির দেখা সেখানেই বেশী। বেশ খানিক্ষণ ঘুরাফেরা করলাম, ডাব খেলাম, উপভোগ করলাম ছেঁড়াদ্বীপ। ফিরে আসলাম বিকেলে। আবার সন্ধ্যার দিকে বিচে গিয়ে সুর্যাস্ত ঠিকমতো দেখতে পেলাম না আবহাওয়ার জন্য, আকাশ মেঘলা ছিল, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে ভয় পাচ্ছিলাম সিগনালের, পরদিন ফেরা হবেনা নইলে৷ যাইহোক রাতে খেয়ে আবার বিচে গেলাম, অমাবস্যার জন্য বড় জোয়ারের সাথে দেখলাম সাগরের ভয়ঙ্কর রুপ, বিচ পার হয়ে দ্বীপের দিকে ধেয়ে আসছিলো স্রোত, সাথে তার ভয়াল আর্তনাদ। প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত ভয়ঙ্কর সুন্দর পরিবেশ টা উপভোগ করে ফিরে এসে ঘুম দিলাম।



সকালে উঠেই বিচের পার ঘেষে হাঁটতে হাঁটতে নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর "সমুদ্র বিলাস" দেখতে আসলাম। বেশ কিছুক্ষণ কাটালাম এরপর বাজার ঘুরে কেনকাটা সেরে আবার রিসোর্ট এ৷ ব্যাগ গুছিয়ে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে চলে এলাম ঘাটে, কর্ণফুলী শীপের টিকেট নিয়ে রওনা দিলাম কক্সবাজার এর উদ্দ্যেশ্যে, ১৭ তারিখ রাত ১০ঃ৩০ টার দিকে পৌঁছালাম কক্সবাজার। সেখান থেকে পরদিন সকালে ঢাকা। আর তার সাথেই সমাপ্তি ঘটল সেন্টমার্টিন ভ্রমনের।


যাতায়াত খরচঃ

নোয়াখালী থেকে চট্টগ্রাম, শাহী পরিবহন (নন-এসি) ২৮০ টাকা করে, চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ, এস আলম পরিবহন (নন-এসি) ৪০০ টাকা করে, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন, ট্রলারে ২২০ টাকা করে, সেন্টমার্টিনের ভ্যান গুলো রিজার্ভ ১৫০-২০০ করে নেয়, দামাদামি করে নিবেন৷ রিসোর্ট ভাড়া বিভিন্ন দামের আছে, যে যার যার সাধ্যমতো নিয়ে নিবেন। রিসোর্ট থেকে ছেঁড়াদ্বীপ এর জন্য সাইকেল ভাড়া ঘন্টায় ৪০-৫০ টাকা করে৷ বাইকে ও যাওয়া যায়। সেন্ট মার্টিন থেকে কক্সবাজারের কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ১০২০ টাকা করে, কক্সবাজার জেটি ঘাট থেকে লাবণী পয়েন্ট বাস কাউন্টার, রিজার্ভ অটো ১৫০-২৫০, দামাদামি করবেন। কক্সবাজার থেকে ঢাকা, মর্ডান লাইন (এসি) ৭০০ টাকা। বাসটা রানিং+খালি থাকাতে এই দামে। আসল ভাড়া ১২০০ করে সম্ভবত।


*আমাদের চারপাশের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আপনার, আমার। যেখানে সেখানে অপচনশীল ময়লা ফেলা থেকে নিজে বিরত থেকে অন্যকে উৎসাহিত করুন। ধন্যবাদ।


সেন্টমার্টিন ডায়েরি ১৪-১৮.১০.২০২০

bottom of page