কমলদহ ডায়েরি
top of page

কমলদহ ডায়েরি

Written by Minhaz Efat

 

কমলদহ ট্রেইল!


যাত্রার শুরুটা প্রত্যেকবার এর মত ভেবেচিন্তে ছিলো না, মাত্র কাল থেকে(১৪ জুলাই এর ঘটনা) লকডাউন শিথিল হবে কিছুদিন এর জন্য। বন্দি জীবন থেকে খানিকক্ষণ এর জন্য বের হতে এক রাতেই প্ল্যান করে ফযরের সময় উঠে রওনা দিয়ে দিলাম, যাত্রাসঙ্গী ছিলো কয়েকটা কাজিন।

ঘুম ঘুম চোখে গ্লাস নামানো গাড়ির জানালা দিয়ে আসা সূর্যোদয় এর কোমল আভা গায়ে মাখতে মাখতে গাড়ি ছুটছে মিরসরাই এর পথে। নোয়াখালী থেকে ছাড়া আমাদের গাড়ির গন্তব্য বড় দারোগার হাট। ফেনী পেরোনোর খানিক পরেই জায়গাটা। আর ঠিক সেখান থেকেই প্রায় ২-৩ কিলোমিটার ভেতরেই গেলেই পাবেন কমলদহ ট্রেইলের প্রবেশদ্বার।


পেয়ে যাবেন কিছু খাবার দোকান, চাইলে সেখানে সকালের নাস্তা সারতে পারেন সাথে করে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় পানি, হাল্কা খাবার। (ভেতরে খাবারের খোসা না ফেলে, ব্যাগে করে নিয়ে আসবেন) ট্রেইলের পর্যটক ঘোরা ঝর্ণা, ঝিরিপথ ঘুরে আসতেই দুপুর গড়িয়ে যাবে। ঢোকার আগে চাইলে অইখানের হোটেল গুলা তে খাবার বুক করে যাবেন, তাহলে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে হয়েই পেটপূঁজো সারতে পারবেন।


যেহেতু আমরা ৫ জন ছিলাম, আর প্রায় সবাই প্রথমবারের মত কমলদহে ঢুকব তাই একজন গাইড নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতেই চোখ পড়লো একটা গ্রুপের ওপর তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছে ভেতরে ঢোকার। তখনই ভাবলাম ওদের সাথেই এড হয়ে ঢুকে পড়ি। টিম লিডার কে খুঁজে বের করে কথা বলার পর বেশ আন্তরিকতার সাথে তাদের সাথে আমাদের যেতে কোনো সমস্যা হবেনা বলে জানায়। লকডাউন পরবর্তী ট্যুর হওয়াতে মানুষজন ছিলো না খুব একটা। মোটামোটি মিডিয়াম সাইজের একটা টিম হয়ে যাত্রা শুরু করি।


ট্রেইলের মুখে ঢুকতেই ঝিরিপথের গা শীতল করা পানি এডভেঞ্চার শুরুর আগের রিপ্রেশমেন্ট এর ছোঁয়া দিয়ে যায়। এরপর আরাম করেই রুপসী ঝর্ণা বা কমলদহের মেইন যে ঝর্ণা সেটায় পৌঁছে যাই। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ কাটানোর পর এবার মোটামুটি এডভেঞ্চারাস পথ পাড়ি দেয়ার সময়৷ পাহাড় কেটে মানবসৃষ্ট কোনোরকম সিঁড়ির মত পাহাড়ের গা ঘেষা ছোট ছোট খাঁজ আর গাছ থেকে বের হয়ে আসা ঝুলন্ত শেকড় আকড়ে উঠে পড়ি পরবর্তী স্টেজে। পাহাড়ি ট্রেইল ধরে প্রকৃতির নিদারুণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে হাঁটতে থাকি প্রকৃতি সৃষ্ট রাস্তা ধরে।

অই গ্রুপ টা কে ফলো করতে করতে সামনে পড়ে দুটো রাস্তা, একটা গেছে ছাগলকান্দা ঝর্ণার দিকে, যেটাতে নরমালি সবাই যেয়ে ঘুরে চলে আসে। আরেকটা যেটা বাকি ছিলো সেটা ধরেই আমরা যাই ওদের পিছু পিছু, প্ল্যান হলো এখান থেকে ঘুরে এসে এরপর ছাগলকান্দার দিকে যাবো। বেশ সুন্দর ট্রেইল ধরে যেতে যেতে বেশকিছু ছোট বড় ঝর্ণাস্নান সারলাম।



যেহেতু পাথরের উপর আপনাকে হাঁটতে হবে সেহেতু পায়ের গ্রীপ ভালোমতো পাওয়ার জন্য এ্যাঙ্কলেট আর ট্রেইল ফ্রেন্ডলি জুতা পরে ঢুকা ই উত্তম। আর একটু অমনোযোগী হয়ে হাঁটলে বেশ কিছু বিপজ্জনক গর্তে পড়ার চান্সের পাশাপাশি পাথরের উপর পড়েও ইঞ্জুরড হওয়ার চান্স অনেক৷ যেমন টা হয়েছিলো আমাদের সাথের কয়েকজন।

আমাদের সাথের একজন ভালোমতো ইঞ্জুরড হওয়াতে আমাদের দূরন্তপনায় কিছুটা ভাটা পড়ে এক জায়গায় বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাই। এরপর আবার ছাগলকান্দার উদ্যেশ্যে যাই। ছাগল কান্দা পৌঁছোতে তখন প্রায় মধ্যদুপুর। সেখানে সবাই গোসল করার ফাঁকে, কয়েকজন পাহাড় বেয়ে আরো ভেতরে চলে যায় আর আমরা রয়ে যাই ঝর্ণার কাছে। এরপর ভালোমতো ঝর্ণায় সময় কাটিয়ে ফেরার রাস্তা ধরি।



যেহেতু গ্রুপের কয়েকজন উপরে সেহেতু আমরা পাঁচজন ই বাকিদের বিদায় জানিয়ে হাঁটতে থাকি এবং এক পর্যায়ে বেরিয়ে পড়ি মোটামোটি রোমাঞ্চকর কমলদহ ট্রেইল থেকে। ভেতরে বেশ কিছু জায়গায় নেটওয়ার্ক একদম ই থাকেনা। সেক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক এর বাইরে দিনের অর্ধেক এর মত কাটানোর চিন্তাধারা মাথায় রাখবেন। বেরিয়ে এসে একটা পুকুরে গোসল সেরে খাওয়া সারলাম। এবার বাড়ি ফেরার পালা। তার আগে যেহেতু সাথে গাড়ি আছে, বাঁশবাড়িয়া সি বিচে সূর্যাস্ত দেখে যেতে পারলে মন্দ হয়না যেই ভাবা সেই কাজ। শেষ বিকেলে নিজেদের রিফ্রেশ করি সেখানে। সন্ধ্যার পর এবার ফাইনালি বাড়ি ফেরার উদ্যেশ্যে রওনা দেই। শেষ হয় আমাদের রিফ্রেশিং এডভেঞ্চারাস ডে লং ট্যুর।



নিজেরা যেহেতু গাড়ি নিয়ে গেছিলাম তাই আর খরচের হিসেবে গেলাম না। তবে ডে লং ট্যুর এর জন্য বেশ বাজেট ফ্রেন্ডলি একটা ট্যুর দিতে পারবেন।


*আমাদের চারপাশের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আপনার, আমার। যেখানে সেখানে অপচনশীল ময়লা ফেলা থেকে নিজে বিরত থেকে অন্যকে না ফেলতে উৎসাহিত করুন। ধন্যবাদ।


কমলদহ ডায়েরি

১৫-০৭-২০২১

bottom of page