By Farzana Afroz
সারারাত হাড় কাঁপানো শীতের সাথে লড়াই করে ট্রেন জার্নি শেষ করেই, জেলখানা ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সেখান থেকে ট্রলার দিয়ে পৌঁছে গেলাম আমাদের কাঙ্ক্ষিত Ship-""The Wave"" এ।

শিপে উঠেই মনে হল কোন একটা লাক্সারিয়াস হোটেলে পৌঁছে গিয়েছি! এত সুন্দর ডেকোরেশন! কারুকার্জ! আর তাদের আন্তরিকতা সবকিছু মিলিয়ে ১০০/১০০। সকালের নাস্তাটা সেরে সবাই যখন জাহাজ থেকে সমুদ্রের রূপ দেখতে ব্যস্ত, আমি এই সুযোগে ছেলেকে নিয়ে কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে ফেলেছি।

বাহির থেকে দরজায় টোকা পড়তেই বুঝলাম লাঞ্চের সময় হয়ে গিয়েছে। আমি তো খুবই এক্সাইটেড, একেবারে রেডি হয়ে লাঞ্চ করতে চলে এসেছি।
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবাই ট্রলারে চেপে রওনা দিলাম, উদ্দেশ্য করমজল পয়েন্ট।
গন্তব্যস্থলে পৌছেই টুরিস্ট গাইড এবং ফরেস্ট অফিসার আমাদেরকে কয়টা নির্দেশাবলী দিলেন যেমন- শব্দ করা যাবে না, খাবার বের করা যাবে না, একসাথে হয়ে হাঁটতে হবে, গ্যাপ রাখা যাবে না, আরো অনেক কিছু।
প্রথমেই চোখে পড়ল সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা হরিণগুলোর উপর। তার পাশে রয়েছে কুমিরের খাঁচা। আর বানরগুলো সব খোলামেলা ছোটাছুটি করছে।

হঠাৎ করে পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল, "এই দেখো একটা ছাড়া হরিণ!”।পেছনে তাকাতেই দেখলাম, সেখানে বসে অনেকেই হরিণের খাবার বিক্রি করছে এবং একটি হরিণ শাবক খুব আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মনে হলো, হ্যাঁ, আসলেই এটা ওদেরই রাজ্য, সারিবদ্ধ হয়ে সামনে এগুতেই খুব ফটোসেশন হলো, হালকা-পাতলা বিশ্রাম নিয়েই, কাঠেরপুলের উপর দিয়ে যাত্রা শুরু করলাম।
সুবিশাল ম্যানগ্রোভ, চারিপাশে ঘন গাছ দিয়ে ঢাকা, তারি মাঝে কাঠেরপুল। অনেকটা পথ হেঁটে যাওয়ার পর দেখা মিলল ওয়াচ টাওয়ার এর। অনেকেই উপরে উঠে পুরো সুন্দরবনের সৌন্দর্য এক নিমিষে চোখ বুলিয়ে ফেলেছে।
সেখানে গিয়ে শুনতে পেলাম, ""আমাদের সাথে আসা ভুট্টু ভাই এর খাবার নাকি বানর ছিনিয়ে নিয়েছে""এটা নিয়ে যেমন হাসাহাসি হয়েছে, তেমনি সতর্কতার পরিমাণটাও আরো বেড়ে গিয়েছিল।
এসব কিছু দেখা শেষ করে, আবারো শিপের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যেহেতু আনলিমিটেড চা-কফির ব্যবস্থা রয়েছে, কোনরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই এক কাপ কফি হাতে সমুদ্র দর্শনে বসে পড়লাম।
কিছুক্ষণের মধ্যে অ্যানাউন্সমেন্ট হল, কালকে সকাল ৬টার মধ্যেই আমাদের বের হয়ে যেতে হবে। একসাথে দুটো পয়েন্ট দেখব। এখন শুধু কালকের ভোরের অপেক্ষা।